তৃষ্ণা বসাক

কুয়োতলা

রিংকু দূর থেকেই দেখতে পেল পারুল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পারুল লম্বা বলে এখান থেকেই তার চেহারাটা চোখে পড়ছে। মাজা মাজা রঙ, নিটোল শরীর, বাড়িতে ভেতরের জামা পরে না, কিন্তু বুক কী, একেবারে সিজনের ঠাসা ফুলকপির মতো। যদিও পারুলের পাছা বলে কিছু নেই, শরীরে একটু ব্যাটালে ছাপ আছে যেন। রিঙ্কু ভাবছিল বুক না থাকা মেয়েদের তো সবাই নিমাই বলে, পাছা না থাকলে কী বলবে?
রিংকু যখন জুনপুটে মাছের কোম্পানিতে কাজ করত, সে একা নয়, অনেকগুলো মেয়ে, তখন কাজের ফাঁকে একসঙ্গে হলেই কেবল এসব কথা, হাসাহসি, গা টেপাটেপি, দুএকটা মেয়ের চুলকুনি ছিল, ফাঁক পেলেই ছেলেদের সঙ্গে চলে যেত বালিয়াড়ির দিকটা। ধরা পড়ে চাকরিই চলে গেল একজনের।রিংকুর ওসবে টান ছিল না। ও ভাবত আরও বেশি রোজগার কী করে করা যায়। ওর কাজ ছিল মাছের ওজন করে ওজন অনুযায়ী আলাদা আলাদা প্যাকেটে ভরা। নিখুঁত কাজ করত সে। মালিক বলেছিল আর বছর দুয়েকের মধ্যে ওকে সুপারভাইজার করে দেবে।
তা আর হল কই? হাসনাবাদ লাইনের মদনখালিতে তাদের বাড়ি, অতদূরে ফেলে রাখবে বাপ মা? বিয়ে দিতে হবে না? দিল তো দিল, একটা বোষ্টম ফেমিলিতে। টাইটেল ওঁরাও, রিংকু ভেবেছিল এসে মেটে ইঁদুরের মাংস খেতে হবে বুঝি। ওমা, এসে দেখল, এরা কোন ঠাকুরের নাকি শিষ্য, মাছ মাংস তো দূর, রসুন পেঁয়াজ অব্দি বাড়িতে ঢোকে না, আর ছোট থেকে সেসব খেয়েই বুঝি হারান অমন ম্যাদামারা। চেহারা দেখো হাট্টাকাট্টা জোয়ান,কিন্তু আসলে ফোঁপরা। হারানের বাপ নারাণও একইরকম, রিক্সা টানত, কিন্তু তাড়ি গিলে সে রিক্সা গেল। সংসার টানল তো এই পারুল। রিংকু উঠোনে চটি ছাড়তে ছাড়তে ভাবে এত বছর বাইরে কাজ করে, এতগুলো বাচ্চা বিইয়ে চেহারার বাঁধুনি অমন রাখল কী করে পারুল?
পারুল এক গ্লাস লেবুর সরবত করে মুখের সামনে ধরে। উঠোনের একধারে গন্ধলেবু গাছ, তাছাড়া লংকা, ধনেপাতা, এবার আলুও বুনেছে পারুল।বেড়া ঘেঁষে সবেদা, কামরাঙ্গা, জামরুল।
পারুল তার খরখরে হাত দিয়ে তার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলে ‘শোন, সব কাজের বাড়ি ফোন করে দে, কাল কাজে যাবি না’
রিংকুর মটকা গরম হয়ে গেল। ‘ছুটি কি হুট করে নেওয়া যায়? এই তো লকডাউনে একমাস বসিয়ে মাইনে দিল, আবার হঠাৎ ছুটি করলে চলবে? ছাড়িয়ে দ্যায় যদি’
পারুল মিস্টি করে বলে ‘চেতিস কেন? কাজ আসবে, যাবে, কিন্তু এসব টেইম চলে গেলে আর আসবে?’
রিংকু বুঝতে পারল পারুল কোন টাইমের কথা বলছে। বিয়ে দুবছরও হয়নি। খালি বাচ্চা আর বাচ্চা। নির্ঘাত গুরুদেবের কাছে নিয়ে যাবে। লোকটাকে একদম ভাল্লাগে না রিংকুর। খালি বুকের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলল না মুখে, রাগ রাগ মুখ করে কুয়োতলায় সাবান ধুঁধুলজালি নিয়ে বসে গেল। এইসময় শ্বশুর কোন ঠেকে তাড়ি গিলতে যায়। হারান ফিরতে সেই সন্ধে। পারুল ঘরে টিভি খুলে হাঁ করে বসে থাকে। চারদিকে ঘন গাছের আড়ালে এইসময় ন্যাংটো হয়ে চান করলেই বা কী? রিংকু অবশ্য সায়া বুকে বেঁধে চান করে। আজো করছিল। হঠাৎ মনে হল কে যেন তাকে দেখছে। পারুল। ধুঁধুল জালি দিয়ে আচমকা তার পিঠ ঘষে দিতে আরম্ভ করল। কীরকম শিরশির করছিল রিংকুর গা। এই দু বছরের মধ্যে হারান তাকে আঁচড়েছে কামড়েছে অনেক, কিন্তু আদর করতে পারেনি। পারুলের জালি আস্তে আস্তে তার সায়ার বুকের গিঁট খুলে ভেতরে নেমে আসছিল।
রিংকু খসখসে গলায় বলল ‘আমি কিন্তু কাল তোমার গুরুদেবের কাছে যেতে পারব না। খালি শালা বুকের দিকে তাকিয়ে থাকে’
‘আরে এরকম বুক দেখলে কে না তাকাবে? আমাদের ঘরের মদ্দা দুটোর মতো বোকাচোদা নয় তো কেউ। আমারটা দেখবি, ও বউ? একটু চান করিয়ে দিবি আমাকে? দে না’
পারুল কি কাঁদছে? রিংকু বুঝতে পারে না। পারুল নিজেই নিজের ব্লাউজ টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে। রিংকু দেখে দুটো ঠাসা সবুজ রঙের ফুলকপি যেন, কী যেন বলে বউদিরা ব্রকোলি না কী? কোনদিন খায়নি সেই সব্জি রিংকু। আজ তার স্বাদ নেবে তার জিভ। তার আগে ধুঁধুলের জালিতে লাগা সাবানের ফেনায় সে ফুঁ দ্যায়। রংবেরঙের বুদবুদ ওড়ে হাওয়ায়। ক্রমে ওদের কুয়োতলাটাও একটা বুদ্বুদ হয়ে যায়।

This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

2 Responses to তৃষ্ণা বসাক

  1. অজ্ঞাত বলেছেন:

    এ ভাবে ভাবা যায়… ভাবিনি।

  2. Manasi Ganguli বলেছেন:

    আরিব্বাস

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s