তপশ্রী পাল

দুটি অণুগল্প

খেলা

কাঁধে বিরাট কিটব্যাগটা নিয়ে ঘর্মাক্ত দেহে লেডিস চেঞ্জরুমে ফিরলো রিলা। বাইরে তখনো মাইকে ওর নাম আর আজকের ম্যাচের রোমহর্ষক কাহিনী আন্যাউন্সড হচ্ছে! মনে তীব্র অবিশ্বাস্য আনন্দ! ও স্বপ্ন দেখছে নাতো? সুদূর ভারত থেকে ওয়াইল্ড কার্ডে আমেরিকার এই বিখ্যাত টেনিস টুর্নামেন্টে ঢুকে আজ ফার্স্ট রাউন্ডের ম্যাচে হারিয়েছে বিশ্বের এক নম্বর মিলিন্ডাকে! ছয় ফুট দু ইঞ্চির মিলিন্ডা! মহিলা সার্কিটের ত্রাস! হয়তো চোটের কারণে মিলিন্ডা একেবারেই খেলতে পারেনি নিজের খেলা, তাও তিন সেট টেনেছে! টাওয়েল দিয়ে ঘাম মুছে টিশার্ট ছেড়ে নিলো রিলা। চেঞ্জরুমে এখন কেউ নেই। সপসপ করছে টাইট স্পোর্টস ব্রা! খুলে দিলো হুকটা। আনমনে আয়নায় তাকিয়ে ভাবছিলো ম্যাচের খুঁটিনাটি! পিছনের দরজাটা খুলে গেলো। আয়নায় মিলিন্ডার ছায়া! নিশ্চই চেঞ্জ করবে। মুখে হাসি, এগিয়ে আসছে মিলিন্ডা! কোর্টে ব্যাট ছুঁড়ে মুখ গুঁজে পড়েছিলো এতো আপসেট ছিলো! পিছনে এসে হঠাত ওকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গভীর চুমু খেলো। “ইউ প্লেড ফ্যান্টাসটিক্যালি ডার্লিং! বি মাই পার্টনার!” বলেই ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর ছোট্ট বুকদুটো নিজের ভারী স্তনে ঘষতে থাকলো মিলিন্ডা! উত্তপ্ত নিশ্বাসে উত্তাল ওর বক্ষ! তীব্র অস্বস্তিতে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো রিলা! কিন্তু মিলিন্ডার চওড়া কব্জীর জোর সাংঘাতিক! চেঞ্জরুমের কোণে একটা লম্বা বেঞ্চে ওকে শুইয়ে ফেললো মিলিন্ডা! মিলিন্ডার দেহের চাপ সহ্য করতে করতে রিলা অনুভব করলো মিলিন্ডার শীতল জিহবা ঢুকছে ওর যোনীতে আর সে হিসহিস করে বলছে “ইউ আর ডিফিটেড!”


ওর সঙ্গে দেখা

বেশ রাতে সেদিন গাড়ী নিয়ে ফিরছিলাম দক্ষিণ শহরতলী ছাড়িয়ে অনেকদূর থেকে। ড্রাইভার বললো তেল না ভরলে বাড়ি অবধি যাওয়া যাবে না। গড়িয়ার কাছে একটা নতুন পেট্রোল পাম্পে বাধ্য হয়ে ঢুকে পড়লাম। তেল দিচ্ছে প্যান্ট শার্ট পরিহিত মেয়েরা। মাথার লম্বা চুল ঝুঁটি বাঁধা।
গাড়ী লাগিয়ে কার্ডটা বাড়িয়ে বললাম “পাঁচশো টাকার পেট্রোল”। একটা কালো লম্বা পুরুষালী হাত এগিয়ে এলো! হাতে অনেকখানি উল্কি কাটা! একটা পুরুষালী গলা বললো “স্পিড নেবে না নরমাল গো?” বেশ চমকে উঠলাম! আমি কি ভুল করছি? কেমন চেনা লাগলো গলাটা! গাড়ী থেকে নেমে ভালো করে তাকালাম ওর মুখের দিকে! আরে! একে তো নিয়মিত দেখেছি রুবি হসপিটালের মোড়ে শাড়ী পরে হাততালি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোতে ভিক্ষে চাইতে! সঙ্গে ওরই মতো আরো কয়েকজন যাদের চলতি কথায় বলি হিজরে! বেশীরভাগ গাড়িই অসস্বস্তিতে কাঁচ তুলে দিলে, ওদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে গালাগালি আর অভিশাপ! কেউ আবার সকাল সকাল ওদের মুখ দেখার বিরক্তি থেকে উদ্ধার পেতে কোনরকমে বাড়িয়ে দেয় দু দশ টাকা! দু একজন তো দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে কমপ্লেনও করে! একদিন আমি ওকে দশ টাকা দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওর নাম। হেসে বলেছিলো “ডায়না গো!”
বললাম “তুমি এখানে!” মৃদু হেসে বললো “আ মরণ! কাজ করে রোজগার করি গো! হিজরে মানেই হাততালি দিয়ে ভিক্ষে করা নয়! দিন বদলাচ্ছে! এই পাম্পের মালিকও আমাদেরই মতো একজন!”

This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

1 Response to তপশ্রী পাল

  1. Manasi Ganguli বলেছেন:

    দুর্দান্ত

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s