সুস্মিতা সাহা

ডুরে শাড়ি ও লাল শিফন

কি বলছো তুমি আসতে দেরি হবে।তা হোক্ না আমি অপেক্ষা করছি গো।এসো এসো ধীরে সুস্থেই এসো। আমি কি করব অতক্ষণ? কেন তোমার জন্য আনা শাড়িটি আবার দেখবো মন প্রাণ ভরে।ভাববো যে, তোমাকে কেমন মানাবে এই লাল রঙটায় ।একেবারে ‘গোলাপ সুন্দরী’ আমার!

জানো তোমাকে যেদিন প্রথম দেখলাম সেদিন তুমি টকটকে লাল একটি শিফন পরেছিলে।আলাপ হয় নি তখনো।কি ইন্টারেস্টিং,কি প্রিটি,কি ডেয়ারিং ! বাব্বা এর সাথে আগামী দিনগুলোতে কাজ করবো কি করে? আমার মিডলক্লাস মানসিকতায় খুব খুব আড়ষ্ট ভাব এসেছিল।সাদামাটা চেহারায় আমি তখন নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি।

কি আশ্চর্য না, তুমি আমাকে কত সহজেই কাছে টেনে নিলে।পাশাপাশি বসতাম আমরা,তোমার সোনালি ফর্সা রঙের ত্বক দেখতে দেখতে আমি কিরকম যেন মুগ্ধ হয়ে যেতাম।তারপর সেই তোমার যেবার প্রথম বিদেশ সফর, উফ্ফ কি excitement আমার।”আমাকে ফোন করবে তো বিদেশ থেকে ?” ”প্রমিস: প্রমিস: প্রমিস:” সোনালী চুলগুলো ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে উঠলে তুমি, আমার golden girl।
আমার যে মাথার চুলে দু/একটা রূপোলি রেখা দেখা দিয়েছে ভুলেই গিয়েছিলাম।সবার জন্যই চকোলেট এনেছিলে তুমি কিন্তু আমার শুধু মনে হচ্ছিল এই চকোলেটের মধ্যে ধরা রয়েছে তোমার নরম ঠোঁটের মিষ্টি হাসি।তা শুধু আমারই জন্য।

তারপর সেই যেবার তুমি আমার কবিতা পাঠ শুনে আমাকে congratulate করলে আমি যেন হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে লাগলাম।তোমার ইতিমধ্যেই boyfriend হয়ে গেছে দেখে আমার অভিমান হলো, খুব খুব অভিমান।তারপর তুমি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললে ” কি করবো বলো?এতো সংসারের নিয়ম।তবে তোমার আমার বন্ধুত্ব চিরদিনের।আমাদের কথা আমাদের মতো করে কেই বা বুঝবে বলো?তুমি আমার সবথেকে প্রিয়। না কি প্রিয়া?” ঝিকমিক করে হেসে উঠলো ও,যে হাসিটার প্রেমে পড়ে আছি আমি সেই কবে থেকে।
তারপর, না তারপর আর কিচ্ছু হলো না।একটি ডুরে শাড়ি পরা মধ্যবয়সিনী টুকটুকে লাল শাড়ি পরা গোলাপ সুন্দরীর সাথে চলে গেলো ঐ ট্রাম রাস্তা পেরিয়ে, ঐ দূরে যেখানে হাতে হাত রেখে দুটি অসমবয়সী মেয়ে নিজেদের ভালবাসার কথা লিখতে লিখতে গাইতে গাইতে হাঁটতে পারে আজীবন।

This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

1 Response to সুস্মিতা সাহা

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s