সুপ্তশ্রী সোম

মোহ

রিক চলে গেলো। ও চলে যাওয়ার পর ঘরটা এমন খালি খালি লাগছে যে মন টিকছেনা। ও এসেছিল সেই যখন আমাদের বারান্দায় বেগুনি ফুল ফুটেছিল। লতাটা এমন ঝামরে পড়েছিল যে কিছু দেখা যেতনা। ও চট করে ছেঁটে গাছটাকে বেঁকিয়ে এত সুন্দর করে বাঁধলো । আমি ওসব পারিনা। বাইরে যেমন তেমন তো নয় ই।আমি সাজতে ভালোবাসি। চুলটা যদি স্টেপ করে কাটতে পারতাম। একটু পিঠের মাঝামাঝি অব্দি বাড়িয়ে। আর কানে ঝোলানো একটা বড় ঝুমকো। রুপোর। আমার গলাটা বেশ লম্বা। রিক বলে , ” তোকে যা লাগবে না ! আর একটা নাকছবি তোর ওই নাকে বলে ইশারায় চুমু আঁকে। হুঁ । রিক এমনিতে খুব সুন্দর। মাত্র কমাস ই আমাদের নিচের ঘরে পেয়িং গেস্ট হয়ে এসেছে। মা সবাইকে নেয় না। ছেলেটার এতো সুন্দর ব্যবহার । মা যে মা এত কড়া। মাও গলে জল। আমার দ্বারা তো কিছুই হয়না। ওই সাজ গোজ ঘর গুছানো এসবই ভালোবাসি। বাইরে বেরোলে যে খোলস পরতে হয় তা আমার এক্কেবারে পছন্দ নয়। তাই ঘরেই থাকি। এই এত বড় বাড়ি সাজানো পরিষ্কার করা সব আমার একার হাতের। এখন মা বিছানায় পড়া অব্দি রান্না টাও করছি। গোড়ার দিকে বাগানে গেলে আমি ওর ঘরে উঁকি দিয়ে দেখেছি যে কি করছে। সেই শুরু। ও ইনস্টিটিউটে বেরিয়ে গেলে ওর ঘর গুছিয়ে দিতাম।ওর ঝকঝকে চেহারায় কালো টি শার্ট !দেখে ফিদা। আমি ওর ঘরে যাওয়া শুরু করলাম। খালি ঘরে ওর বিছানায় শুয়ে একদিন চোখ বন্ধ করে ওর গায়ের গন্ধটা শুষে নিচ্ছি এমন সময় ও এসে আমাকে দেখে অবাক। আমার চোখে চোখ পড়তে ও হেসে বললো , “আমি চলে যাই”? আমি এক দৌড়ে ঘরে। ও বুঝেছে। তা সত্ত্বেও ভালো বাসতে কসুর করেনি। এত দিন খালি কল্পনা করতাম আমি যাকে ভালোবাসবো সে কেমন হবে। এখন আর সে সব ফ্যান্টাসি তে যাই না। আমি জানি চোখ বুঝলেই আমার সামনে এসে কে দাঁড়াবে। আমি ওর বুকে মুখ ঘষি, কত অত্যাচার করি সব হাসি মুখে ও সহ্য করে। সেদিন নীল রংএর একটা লং ড্রেস নেটে দেখে ওকে বলেছিলাম ,” এই এটা আমাকে মানাবেনা’ বলো !!” ও বললো ,”বাবা কি বাজে তোর পছন্দ রে , ওই কটকটে নীল রং কখনো তোকে মানায়, গায়ের রং টা ভাবতে হয়।” একটু পরে আমি উপরে চলে এলাম। মাকে বললাম মা আমার গায়ের রঙে রয়াল ব্লু মানায় ?” । জানি এরকম প্রশ্ন মাকে খুব দ্বিধা য় ফেলে। মা বললো আমাকে একটু চা খাওয়া তো ? বুঝলাম মা এর ব্যাথার জায়গায় হাত দিয়েছি আবার। নিশ্বাস চেপে মায়ের জন্য চা বসাই। আমি আর নীচে যায়নি দু দিন। মা বললো, এবার তোর জন্মদিনে আর মন্দিরে যাবোনা। সংগীতা র কাছ থেকে কিছু খাবার আনিয়ে নিস। পায়েস টা …অভিমানে মন টই টুম্বুর আমার ।খাবোনা পায়েস। মা বলে,”বলে আয় কাছে ।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। খুব আদুরে মুহূর্ত আমার। হঠাৎ দেখি দরজায় রিক।ওর চোখে প্রশ্ন। মা বলে এই আমার এই আদুরে পাগল টার… মার মুখে হাত চাপি।রিক আমার পাগলামি দেখে হাসে। চলেও যায়। জন্মদিনের দিন মার শরীর সত্যি ই খুব খারাপ । ভীষণ শ্বাসকষ্ট। আমি সারাদিন মায়ের বিছানার পাশে। রাতে মা ঘুমোলো। বারান্দায় একা চেয়ার পেতে বসেছি। মন খারাপ। ও নিচ থেকে আমাকে ডাকলো। সেদিন বেশ রুড লি আমাকে কালো বলেছে। আমি চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই আবার সেদিকে গিয়ে সেই কেরিকেচার। না বাধ্য হয়ে ওর ঘরে যেতেই দেখি নরম মোমবাতি জ্বলছে। একটা খুব সুন্দর কেক আমার নাম লেখা জন্মদিনের । আর আমাকে ঢুকতে দেখেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল বাবা কি রাগ মেয়ের । ও আমাকে যে চোখে দেখে সেটা বলাতে আমি গলে গেলাম। আমি বাইরে যা ভিতরে তো তা নই। ও আমার আসল রূপ টা বুঝেছে।।হাত দিয়ে চোখ চেপে আমাকে ও পাশের ঘরে নিয়ে গেল। ওর গায়ের গন্ধ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। আমাকে বললো , ড্রেস টা চেঞ্জ করে এসো। দেখি সেই ব্লু ড্রেস টাই। আনন্দে আমার চোখ থেকে জল পড়তে শুরু করেছে। ও বললো ,” একটুও ঠাট্টা বোঝেনা ” । সেই রাতে আমি ওকে সব বলেছি। ও বললো ও জানতো। আর আমাকে খুব ভালোবাসে। তারপর থেকে আমরা একে ওপর কে ছেড়ে থাকতে পারিনা। শুধু মা কে বলেছি। অনেক কেঁদেছে কিন্তু শেষে মেনে ও নিয়েছে। মার বুদ্ধি তেই ও জি আর ই দিয়েছে। আমিও নতুন ভাবে পড়াশুনো শুরু করেছি। ও ফেলোশিপ পেয়েছে পোস্ট ডক করার। আমাকে নিয়ে যাবে । তারপর আমরা ঘর বাঁধবো। স্বপ্ন সত্যি হবে ? মন মানছেনা। মা ঘুমোচ্ছে নীচে যাই । বেরোবার আগে আর ওর ঘরে আসিনি। ওর সেই কালো টি শার্ট টা নিয়ে আসি। আলমারির পাল্লা খুলে দেখি কিছু নেই। খালি হা হা করছে। সারা ঘর ছেঁড়া কাগজ আর অনেক কিচু পড়ে । একটা মেয়ের ছবি। ও লিখেছে পিছনে ব্যাস আর কদিন ডিয়ার। এবার তোমায় এমন ভালো বাসব,! অনেকক্ষন পর মায়ের গলার অস্পষ্ট ডাক। আমি গেলাম। ” রণ একি করেছিস !” “চুল কেটে ফেলেছি মা।” আমার দিকে চেয়ে মা চমকে উঠলো।” মা রিক চলে গেছে , ও আর কোনোদিন আসবেনা! হাত দিয়ে ফটো টা দেখাই। ” । আমি চিৎকার করে কাঁদছি। মা ও আমাকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো। দ্বৈত বিলাপের শব্দে মধ্যাহ্ন ও তখন শোক গ্রস্ত।

This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

1 Response to সুপ্তশ্রী সোম

  1. Manasi Ganguli বলেছেন:

    বাহ্

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s