মৌমিতা ঘোষ

ফাটল

রান্না চাপিয়েছে সুরঞ্জনা। মাছ ধুচ্ছে দেবশ্রী।পরনে একটা হাফপ্যান্ট আর টিশার্ট। সুরঞ্জনা র নাইটিটা বুকের কাছে ভিজে গেছে ঘামে। হঠাৎ ই জড়িয়ে ধরে দেবশ্রী।
” ছাড়, ছাড়, মাছের গন্ধ তোর হাতে।”
“আদরে আবার গন্ধ কি রে? অন্য গন্ধগুলো? হুঁ?”
“চান করে আয়, তারপর।”
” চল না, একসাথে করব।”
তরকারি নামিয়ে, দুটো মাছ ভেজে ওরা স্নানে যায়। সাবানের গন্ধে শরীরের গন্ধ মিশে যায় দুজনের। ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে সংসার ওদের। সুরঞ্জনা র বর ওকে খুব মারতো। আবার বিছানায় লোকটা হয়ে উঠতো জানোয়ার।ট্রেনে অফিস যাওয়ার পথে দেবশ্রীর সঙ্গে আলাপ। একদিন সহ্য না করতে পেরে পালালো দেবশ্রী র হাত ধরে।কেস ও করেছে বরের বিরুদ্ধে।
চলছে সে কেস। পৌরুষত্ব মানে যে অত্যাচারের লাইসেন্স,এটাই অভিজ্ঞতা।কথায় কথায় সন্দেহ,মারধোর, ভাঙচুর, গালাগালি।
দেবশ্রী ছোট থেকেই বোঝে ওর মেয়েদের ভালো লাগে।সারা পাড়া ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে ক্রিকেট খেলতো। গাছে উঠতো। বাড়িতে প্রথমবার প্রবল মার খায়, যখন‌ ওর লেখা লাভলেটার পড়ে যায় দাদার হাতে।” ছিঃ, একটা মেয়েকে লাভলেটার লিখেছিস তুই?”প্রচন্ড মারে দাদা ওকে। বাবা-মা নির্বাক হয়ে থাকে। সেই থেকে পুরো বড় হওয়াটায় মার, খারাপ কথা,পাবলিক শেমিঙ ছিল ওর নিত্যসঙ্গী।একসময় আর না পেরে ও বাড়ি ছাড়ে। একটা নামী স্কুলের গেম টিচার ও। সুরঞ্জনাকে দেখেই ভালো লেগেছিল। একরকম জোর করেই বের করে নিয়ে আসে ওর সংসার থেকে। তারপর পাক্কা একটি বছর কেটেছে। আদরে, সোহাগে রাখে বৌকে দেবশ্রী। অন্য কারো সঙ্গে কথা বললে সহ্য হয়না ওর।ও তো এত ভালোবাসে! তবু তাপসী, শুভশ্রীদের সঙ্গে এত মাখামাখি কীসের?
এই তো সেদিন ধুন্ধুমার ঝগড়া হল এই নিয়ে। সুরঞ্জনার একটাই কথা, ” আশ্চর্য। তোকে ভালোবাসি, তোর সঙ্গে থাকি বলে আমার কোন বন্ধু থাকতে পারে না?”
” না। পারে না। তোর বরের সঙ্গে থাকলে পারতিস এতো বন্ধুত্ব করতে? মেরে হাড় গুড়ো করে দিতো।”
” তাহলে তোর সঙ্গে আছি কেন?”
ওরা স্নান সেরে বেরিয়ে খাওয়া দাওয়া সাথে। তারপর বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দেয় সুরঞ্জনা। সকাল থেকে প্রচুর পরিশ্রম গেছে। প্রথম প্রথম দেবশ্রী অনেক কাজ করতো। আজকাল দুএকটা কাজ করেই ছেড়ে দেয়। ওকেই সব করতে হয়। দেবশ্রী এসে সটান গায়ের উপর চড়ে।” ঘুমাতে দে।স্নানের সময় হলো তো।”
“এখন আবার চাই।”
না, ভালো লাগছে না।”
“কেন লাগছেনা?তাপসীর কথা মনে পড়ছে?”
” ফালতু কথা বলিসনা।”
ফোনটা বেজে ওঠে। এইসময় তাপসীকেই ফোন করতে হল?
” এই যে সোহাগের কল এসে গেছে।ফোনটা ছিনিয়ে নেয় দেবশ্রী।তুলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাপসীকে। সুরঞ্জনা বাধা দিতে চায়।একটা চড় মারে ওকে ঘুরিয়ে। ফোনটা আছড়ে ভেঙে ফেলে।

এখন দেবশ্রী ঘুমিয়ে।এতসব কান্ডের পর অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে সুরঞ্জনার কাছে।পায়েও ধরেছে এরকম আচরণের জন্য। সুরঞ্জনা চিঠি লিখছে।ট্যাক্সি ডাকা হয়ে গেছে।
“চললাম।তোর মধ্যে ও আদ্যপান্ত এক পুরুষ বাস করে। আর পুরুষকে আমি ঘৃণা করি।”

একটা স্যুটকেস পেটে ভরে গলির মোড় থেকে হারিয়ে যায় ট্যাক্সি।

This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

1 Response to মৌমিতা ঘোষ

  1. Manasi Ganguli বলেছেন:

    চমৎকার

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s