এবং যন্ত্রজাল

রিণি বিশ্বাস
সঞ্চালিকা
যন্ত্রজালে আমি খুঁজে পেয়েছি অনেক পুরোণো বন্ধুকে । বড় হওয়ার সাথে সাথে অনেক ব্যস্ততায় হারিয়ে গেছে সামাজিক আদানপ্রদান । যাদের সাথে জীবনে আর দেখা হবে ভাবিনি তারাও আমাকে পেয়ে আপ্লুত । “তুতো” ভাইবোনকে খুঁজে পেয়েছি । তারা কে, কেমন আছে সেটা জেনেই ভালো লাগে । সে কেমন আছে, কোথায় আছে, এই সব old association গুলো ফিরে পেয়েছি যন্ত্রজালের মাধ্যমে । হয়ত তাদের ছবি দেখে মন ভরে যায় । কিম্বা কিছুক্ষণ চ্যাটালাপ হয় । আজ আমরা অণু পরিবারের সদস্য হলেও আদতে সোশ্যাল নেট ওয়ার্ক আমার সামাজিক পরিবারকে একান্নাবর্তী করে তুলেছে । তবে superficial friendship এ আমি বিশ্বাসী ন‌ই । বন্ধুত্বের আদনপ্রদানে হৃদয়ের একটা জায়গা থাকে এবং সত্যিকারের বন্ধুত্ব পাতাতে যন্ত্রজালের বন্ধুত্বকে একটু যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন । অনেক পাওয়া, না পাওয়ার টানাপোড়েনের মাঝে অন্দর থেকে যে সব বন্ধুরা অন্তরে এসে পৌঁছেছে তাদের মধ্যে একজনের কথা না বললেই নয় তাকে আমি পেয়েছিলাম বহুদিন আগে অর্কুটে । সে আমার ডিজিটাল মা । আমি তাকে মী বলে ডাকি এখন । সে আমাকে তার মেয়ে বলে । এটা আমার জীবনের অনেক পাওয়া ।
আর এখনকার কচিকাঁচাদের মত আমার ছেলের তো যন্ত্রজালেই সর্বক্ষণের ওঠাবসা । close and carefull observation এর মাধ্যমে বড় হয়ে উঠছে সে আন্তর্জালের যুগে ।
যখন তখন ডাইনোসর থেকে মহাকাশ পাড়ি দিচ্ছে তার শিশুমন । হাতের মুঠোয় স্মার্ট ফোনটিতে সাবলীলভাবে সে চলেছে দেশ হতে দেশ-দেশান্তরে । তবে বড়রা সাথে আছি তার supervisor হয়ে ।
নীপবীথি ঘোষ
সঙ্গীতশিল্পী, মিউজিক এরেঞ্জার, কম্পোসার
আমার সঙ্গীত জীবনের অনেকটা ঘিরে ইন্টারনেট । ইমেল, চ্যাট ছাড়াও আন্তর্জালে ইউ-টিউবের মত একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম আমার কাছে যে কতটা সেটা না বললেই নয় । একটা বড়মাপের গানের জানলা খুলে দিয়েছিল এই ইউটিউব । কত অনামা সঙ্গীতশিল্পী পৃথিবীর আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল । প্রচারের আলোয় তারা হয়তা আসাতে পারেনি কিন্তু ইউটিউবে তাদের গান শুনে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত ফ্যান হয়ে গেছি সেই সব শিল্পীর । ভাবতে পারিনি ভারতের এক প্রান্তে বসে আমি বিদেশের যে পপ আর্টিস্টের গান শুনছি সে কেবলমাত্র যন্ত্রজাল থেকে উঠে আসা এক ভবিষ্যতের শিল্পী হয়ে উঠবে । ইউটিউব হয়ত সঙ্গীতশিল্পীর ব্যক্তি স্বাধীনতায় বাধা দেয় না বলে এর গুণগত মান সবসময় উত্কৃষ্ট হয়না । কিন্তু বিনি পয়সায় প্রচারের আলো তো দেখায় ! সকলেরই ইচ্ছে থাকে তাদের মিউজিক্যাল ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপ্রেস করার । তাই এমন একটি প্ল্যাটফর্মে কোয়ালিটির কথা ভাবলে আমাদের চলবেনা । কুন্দন লাল সায়গল যে সময় রেকর্ডিং করেছিলেন সে সময়টাতে রেকর্ডিং এর মান অতটা উত্কৃষ্ট না হলেও আজ এখনকার প্রজন্ম তাঁকে চিনতে পারছে ইউটিউবের দৌলতে । এরপর আসি সোশ্যাল নেটওয়ার্কের কথায় । আমি নিজেও জানতাম না যে আমার গান মানুষের এতটাই ভালো লাগে । ফেসবুকে এসে তার প্রমাণ পেয়েছি আমি । আমার মিউজিক এলবামের ফিডব্যাক থেকে প্রোগ্র্যামের ইনফর্মেশন সবকিছুই ফেসবুকে সাবলীল ভাবে করে এসেছি । মানুষ আমাকে আরো চিনেছে । আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে । আর সব শেষে বলি এত কম খরচে বিশ্বের মানুষের সাথে যোগাযোগ আর আমার সঙ্গীত জীবনের এত ফ্যান ফ্রেন্ডস পাওয়া এ সবকিছুই ইন্টারনেটের দৌলতে । একসময় ISD ফোন কল করে পাগল হতে হয়েছে । আর এখন “দুনিয়া মুঠঠি মে” ! স্কাইপ কলে চায়নার বান্ধবী গান শোনাচ্ছে । প্রোগ্রাম এরেঞ্জ করার প্ল্যান তাও হচ্ছে ইমেলে, গান রেকর্ড করে পাঠানো তাও ইমেলে কিম্বা স্কাইপে বসেই শুনিয়ে দেওয়া যাচ্ছে । জি-টকে অনলাইন আমার নতুন গানের এলবামের ফিডব্যাক পাচ্ছি, ফেসবুকে আমার সাড়ে আট হাজার ফলোয়ার এটাই আমার realisation .. সবচেয়ে ভালোলাগার জায়গা ।
অয়ন চৌধুরী
ফোটোগ্রাফার ও সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্ট
আমরা যারা বাংলা ভাষায় লেখা জোকা করি , মানে চেষ্টা করি, তাদের সুপ্ত একটা মনবাঞ্ছা হল লোকে কী বলল লেখাটা পড়ে সেটা জানা । প্রথাগত কাগজে বই প্রকাশ করে সেই উত্তেজনার অবসান হতে অনেক সময় লাগে ।
ইন্টারনেটে সে ঝামেলা নেই, লেখা আপলোড কর সাথে সাথে কমেন্টস, লাইক্স সব আসা শুরু হয়ে যাবে । এটা একটা উত্তেজনা, বলা যেতে পারে এই উত্তেজনটা উপভোগ করার জন্যই আমি লিখি। নিজের মনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অন্যকে কতটা প্রতিক্রিয়াশীল করে তুলতে পারি, তার মধ্যেই আসল  কৃতিত্ত্ব । টাকা নেই, মজা আছে ।
মানসিকতার ভিত্তিতে আমি কাগজের বইয়ের একেবারে বিরোধী । গত প্রায় চার বছর ধরে বই মেলার সময়টায় আমি আমার লেখা ও ছবি দিয়ে নিয়মিত লোককে বই না কেনার জন্য সচেতন করি অর্কুট ও ফেসবুকের মাধ্যমে, বেশ কিছু মানুষের বিরাগ ভাজনও হয়েছি, জানি আরও হব তাও চালাব।
অবিশ্যি ব‌ইমেলাতে হাজির না হয়েও ব‌ই কিনি কারণ বাংলা ব‌ইপত্র এখন দাপিয়ে বিক্রি হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ।
চরিত্রগত ভাবে একটু একরোখা হওয়াতে, সাফল্যকে কাছে আনতে আমার একটু সুবিধেই হয় ছোট থেকে । আমার আশা, এইবারেও সফল হব । আরও চার পাঁচ বছর লড়াইটা চালাতে পারলে অনেকাংশেই সফল হব। হয়ত তা কোনও পরিসংখ্যানে মাপা যাবেনা, নাই বা গেল ! “তোমার প্রেমের বেদনায় আমারও মূল্য আছে !” রবি ঠাকুরের গানের লাইনের মতই !
কাগজের বই কত মানুষ পড়তে ভালবাসেন, সেখানে কিণ্ডল ফায়ার হাতে … ভাবতে ভাবতে আমারই যতপরনাস্তি আবেগ চলে আসে । ইন্টারনেট না থাকলে, কমপিউটার না থাকলে এ সব হতই না । একা একা কত কথা বলে ফেললাম, কী আশ্চর্য আপনিও মন দিয়ে তা শুনছেন আর ভাবছেন আপনার কাগজের বই পড়া বন্ধ করে দেব, এও কী সম্ভব ? আপনি বিচক্ষণ মানুষ , সত্যি সম্ভব নয় যদি না আপনি একটু এগিয়ে এসে সাহায্য করেন। আরও বেশি করে ই-ম্যাগাজিন  পড়ুন, অনলাইন খবরের কাগজ পড়ুন , বাড়িতে কাগজ কেনা যতটা পারেন বন্ধ করেদিন । তবে আসবে মুক্তি ! Go digital !
শুভায়ণ মুখার্জি
কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট
ইন্টারনেট, যন্ত্রজাল বা আন্তর্জাল যাই বলি না কেন তার সাথে আমার হাতেখড়ি অনেকদিনের । খুব যখন ছোট ছিলাম মা দেখিয়ে দিত নতুন নতুন ওয়েবসাইটে গিয়ে কেমন করে  অনেক তথ্য জানা যায় । যখন স্কুলে উঁচু ক্লাসে উঠলাম সেইটা কাজে লাগল স্কুল প্রজেক্ট করার সময় । এরপর আমার ব্লগদুনিয়ায় পা রাখা ।
বাবার কাছে শিখেছিলাম ওয়েবসাইট বানাতে । ছোট্ট ব্লগ ছিল ২০০৭ থেকে তারপর ২০০৮ এ পাকাপাকি  এবং পুরোদস্তুর ব্লগার হয়ে দেখলাম আর জানলাম কতকিছু । সকলে বলে স্কুলের পড়াশুনোর সাথে ইন্টারনেট সৃজনশীলতা কমিয়ে দেয়, ব‌ই পড়ার অভ্যেস কমে যায় কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা মোটেও হয়নি । আমি ইন্টারনেটকে সঠিক ভাবে ব্যাবহার করে চলেছি এখনো এবং যথেষ্ট লেখালেখি করি ও সুযোগ পেলেই ভালো ভালো ব‌ই পড়ি ।  ইন্টারনেট দুনিয়াটা একটি নলেজের খনি ।  তাকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে হবে ।  ভালো ও মন্দ তো সবকিছুরই থাকে ।  কম্পিউটার তো কেবল মাত্র যান্ত্রিক জানলা  এবং সেই জানলার বাইরে  যন্ত্রজাল বা ইন্টারনেট হল তথ্যভান্ডার ।  পৃথিবীর কোণায় কোণায় কত জ্ঞানের ভান্ডার রয়েছে । তা উন্মোচন করাটা এবং তা বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াটাই একজন সফল ইউসারের দায়িত্ব  ।
আর যন্ত্রজালের সঙ্গী হয়েই তো এবছরে একটা আমন্ত্রণ  পেয়েছি  বিশ্বের অন্যতম সংস্থা গুগ্‌‌লের কাছ থেকে  “গুগ্‌‌ল স্টুডেন্ট এমবাস্যাডার” হয়ে গোয়ায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যোগ দিতে পেরেছি ।
মধুমিতা ভট্টাচার্য্য
হোমমেকার
সেদিন হঠাত করেই নেট বিপর্যয়।  ফলে দিন তিনেক জল-বিন-মছলির মতন হাঁকপাঁক করলাম ঘরে বসে    … আমি থাকি আসামের এক প্রত্যন্ত চা বাগানে, তাই হুট বলতেই শপিং মল, আইনক্স অথবা ঝাঁ চকচক রেস্তঁরা পাওয়া সম্ভব নয়, ত্রিসীমানায় সময় কাটাবার  তেমন কিছু  উপায়ও  নেই  ।  তাই আমার জন্যে নেট মানে সত্যি করেই খোলা জানলা ।  সব চেয়ে বড় কথা হলো অনেক অনেক শুভানুধ্যায়ীকে পাওয়া ।  তাছাড়া সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া কত বন্ধুকে যে খুঁজে পেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই ।  আর যে কথাটা না বললে অপরাধ হবে তা হলো আমি যে দু-চার লাইন লিখতে পারছি তা বুঝলাম এই ‘জাল’ এ বসেই ।   সেখানে ‘বৈদ্যুতিন নেট-সাহিত্য পত্রিকারা তরতরিয়ে শব্দ-সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়, যার ছইয়ের ছায়ায় আমার মত কাঁচা লিখিয়েরাও আয়েস করে হাত-পা মেলে বসার ঠাঁই পায় ।  কত পুরনো গান নতুন করে শুনে মনে নস্টালজিয়ার বন্যা বয়ে যায়।  তবে চাঁদেরও যেমন কলঙ্ক আছে |তেমনি এখানেও দুষ্টু লোকের অভাব নেই |তাই লক্ষ্মণ-রেখার দিকে নজর রাখা জরুরী।
আর সাইড এফেক্ট? আছে আছে… উনুনে বসানো তরকারী পুড়ে যেতে পারে, ছেলেমেয়ের হোমওয়র্ক শেষ না-ও হতে পারে কিম্বা দরকারী আপয়েন্টমেন্টের কথা বেমালুম গুবলেট হয়ে যাওয়াও আশ্চর্য্যের কিছু নয় ।  তবে এক কথায় আমি এবং আন্তর্জাল বা ইন্টারনেট এখন গলাগলি সখী ।
পারমিতা ভাওয়াল
ডিরেক্টর
এস.আই প্রাইভেট লিমিটেড
 যন্ত্রজালের যন্ত্রণা এক বিড়ম্বনা ।   ধূর্তবাক্সর যেরে নাজেহাল কেউকেউ আবার উল্লাসে মাতোয়ারা বিশ্বভুবনে ঢেউ । বোকাবাক্স থেকে ধূর্তবাক্স প্রতিটি বাড়িতে স্টেটাস আনলো , ল্যাপটপ, পামটপ, ট্যাবলেট, আইফোন আরো কত কি উপাদান! না জানলে তুমি বোকা বনে যাবে! কখন যে কি রূপ দেখাবে সে যন্ত্র,  বোঝা মুশকিল । শুধু জানতে হবে এন্টিভাইরাসের মন্ত্র ।
এদিকে যন্ত্রজালের ফাঁদে পড়ে শৈশব হল ঘরমুখো । ইঁদুরের কানমলা খেলাতেই মত্ত, সামর্থ্য সামগ্রী যোগান দেন অভিভাবক । শিশু পায় প্লে স্টেশন । তাই শেখেনা মিলেমিশে খেলার আকর্ষণ । মানসিকতা হয় সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর থেকে সংকীর্ণতম । আর অভিভাবক দেখে অহংকারের পাঁচপা । এদিকে আমরা হলুদ পোষ্টকার্ড, নীলাভ ইনল্যান্ড লেটার আর খামেতে মোড়া অনুভূতির ভান্ডার উড়িয়ে দিয়ে সুলেখা কালির দোয়াত্-কলম শিকেয় তুলি। হাতেলেখার ছোঁয়াচিঠি, গন্ধমাখানো স্মৃতি সবকিছুকে তুড়ি মেরে আন্তর্জালে জুড়ি নিজেকে । ভুবনটাকে এক  আঙুলের নাচনে  দর্শন করে  বেড়ান, আহা  কী  সুখানভুতি, কী আনন্দ !!
জ্ঞানের ভান্ডার  Google..  সাহায্যতে  এনিটাইম প্রস্তুত ; সরস্বতীর আশীর্বাদে মশগুল । পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়  ;  তবুও নিজেরাই  নিজেদের  গোলাম  মনে হয় ! যাকে  খুশি  যা খুশি  ছুড়ে দিতে পারার  আনন্দেতে  মাতল  কিছু প্রাণ !
আর তারপরেই  পেলো একাকীত্বের হাত  থেকে  বাঁচার উত্কৃষ্ট  সমাধান ; অর্কুটেতে কুটকুট, ফেসবুকে ফেস লুকিয়ে  শুধুই ছুকছুক, টুইটারে  টুইটুই করে যাও নিজের কথা, চেনা-অচেনা  সব্বাই  মিলে  দেবে সাড়া  !
একাকীত্বের দাওয়া আর বিলাসিতার দুয়াতে আন্তর্জালের ধুয়া নিঙড়ে নিল সব অভিমানের বোঝা । যন্ত্রচালিত মন নিরন্তর খোঁজে গভীরতার স্পন্দন…. সবকিছুই এখানে নতুন সমীকরণ ! যন্ত্র যখন  নিয়ন্ত্রন করে  যন্ত্রনা, তখন আর কীসের সমালোচনা? দূরকে কাছে করে, কল্পনার  জগতে  আবেগের মিথ্যে খেলা চলে ;
সেই আবেগে  ভেসে বেড়াই কুলুপ এঁটে মুখে, একি বিড়ম্বনা নাকি  উত্থানের  যাতনা?
পূর্বা মুখোপাধ্যায়
স্কুল শিক্ষিকা
ডিপিএস, রুবি-পার্ক
বন্ধু আমার , তোমায় আমি চোখে দেখি নি – শুধু বাঁশি শুনেছি ! কি করে বলি , তোমায় আমি চিনি না ? আমি জানি , তুমি কী ভালোবাসো , কী বাসো না – কোন গান , কোন ছবি , কোন জায়গা তোমার প্রিয় ? এমন কি , এই মুহূর্তে তোমার মনে কোন ভাবের খেলা – তাও জানি ! বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতেছে যন্ত্রজাল – কেমনে দেবে ফাঁকি ? শুধু বোতাম টিপতে জানলেই হল , পড়তে জানলেই হল – আর সামান্য ইংরেজি জ্ঞান – ব্যাস ! পৃথিবী হাতের আঙুলে ! ইউ- টিউবে গান শুনছি , সিনেমা দেখছি , খেলা দেখছি , রান্না শিখছি … ভাবা যায় ! পাচ্ছি অ্যাপসের অসীম সম্ভাবনাময় দুনিয়ার হাতছানি। আর পড়া ? হ্যাঁ , তাও । যদিও বইয়ের পাতায় হাতের স্পর্শ পাই না , পাই না বইয়ের গন্ধ ; কিন্তু পৃথিবীর যে কোন পত্র-পত্রিকা আমি পড়ি আজ একটা যন্ত্রের সামনে বসে – ন্যূনতম খরচে ।
যন্ত্রজাল – আমি বাঁধা পড়ে গেছি তোমার মায়ায় – আর তো ছাড়াতে পারব না কোনদিন !
রবীন্দ্রনাথের কথায় বলি, “ ভালোবাসি সবকিছু – তবে সবচেয়ে ভালোবাসি বন্ধুত্বকে” । আর তার জন্যেই তো আন্তর্জালের ভালো বন্ধুত্ব পাতাতে রাজী সর্বদা ।
স্বাগতা ব্যানার্জী
ওডিশি নৃত্যশিল্পী
শিল্প-কলা-কৃষ্টির সাথে ইন্টারনেটের সারা পৃথিবী জুড়ে একটা বিশাল ভূমিকা আছে । আমি একজন ওডিশি নৃত্যশিল্পী হয়ে সেই জায়গাটা ভালো করে উপলব্ধি করি । বরাবর কোলকাতার বাসিন্দা হয়ে গুরু শ্রীমতী রীণা জানার কাছে নাচ শিখেছি । বিয়ের পর স্বামীর কর্মসূত্রে ইউঅএসেতে এসে নাচ বন্ধ করতে পারিনি কারণ সেটি আমার নেশা এবং পেশা । আর এখানে আসার পর নাচটাকে চালিয়ে যেতে পারছি শুধু এই ইন্টারনেটের জন্য । এখানে এসে ওডিশি নাচের ক্লাস শুরু করি এবং সেই  সুযোগ গুলো হঠাত হঠাত করে এসে যায় ইমেলের মাধ্যমে, আমার ওয়েবসাইটের প্রচারের মাধ্যমে । আমি সশরীরে হাজির না থেকেও ডিজিটালি উপস্থিত থাকি আমার ছাত্রছাত্রীর সাথে… অনলাইন চ্যাট ও স্কাইপ-কলের সাহায্যে । আমার অনুষ্ঠানের ডাক পাই বিদেশেও আর অনুষ্ঠানের প্রোমোগুলি প্রচার করে আরো এগিয়ে যেতে পারি । কত অজানা মানুষ আমার শো’তে উপস্থিত থাকেন, ফিডব্যাক পাই ফেসবুকে, ওয়েবসাইটে । এছাড়া ইন্টারনেটের সাহায্যে আমি নিজেও অনেক বেশি জেনেছি ওডিশির মত ঐতিহ্যবাহী একটি নৃত্যশিল্পের ঘরাণার সম্বন্ধে যার ওপর আমি নিজেই আলোকপাত করে বিদেশের মানুষকে….. আমার দেশের এই শিল্পকলাকে তুলে ধরতে পারি প্রতিনিয়ত ।
বর্ণালী কর
গেস্ট ফ্যাকাল্টি, পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
আজকাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা যেন একটা চালেঞ্জ হয়ে উঠেছে আর ‘ইন্টারনেট’ নিয়ে এসেছে একটা নতুন যুগ |  এতে আছে কত গান, গল্প, ছবি, ভিডিও, অজানা তথ্য, নিত্য-নতুন চমক, আরো কত কি ! আমি তার কতটুকু জানি বা ব্যবহার করি !
সবচেয়ে আশ্চর্য্য লাগে ভাবতে ‘ইন্টারনেট’-এর দৌলতে পৃথিবীটা কেমন ছোট হয়ে গেছে ! অনেক সহজ হয়েছে যোগাযোগ, নিমেষে বিনা খরচে এখন চিঠি পৌঁছায়  পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ; অর্থাত কিনা  ‘ইমেল’ ছেড়ে আমরা এখন আর বিকল্প কিছু ভাবতে পারি না | বিশেষ কারণ ছাড়া ডাক-এ চিঠি পাঠানো আর হয় কোথায়? যদিও আজ দুর্লভ হয়েছে বন্ধুর হাতের লেখার স্পর্শ, তার আন্তরিকতার ছোঁয়া……….সেই পুরনো হিসেব, কিছু পাওয়া কিছু না পাওয়ার গল্প !
যেকোনো পড়াশুনো, রিসার্চের কাজে সাহায্য পেতে পারি ইন্টারনেট-এর সার্চ এনজিনের, বিজ্ঞানের এ এক অভাবনীয় আশীর্বাদ !তবে আলোর পিছনে যেমন থাকে অন্ধকার তেমনিই কিছু অপকার তো হচ্ছেই  সমাজের ;  যখন শুনি মোবইলে ক্লাসের মধ্যে ছেলেমেয়েরা ফেসবুক খুলে আপডেট দেখছে বা টিফিন টাইমে টিফিন না খেয়ে তথাকথিত নিষিদ্ধ ভিডিও দেখছে ইউটিউবে, তখন দুশ্চিন্তা হয় বইকি !
আজ আমাদের ‘ফ্রেন্ড’ অনেক, নিজেকে আর একা লাগে না কারুর কখনো, ফেসবুকে যাও অনেকেই আছে অনলাইন’; চমক-বিনোদন তো অনেক ! কিন্তু সময় কই? দিনটাকে তো আর টেনে লম্বা করতে পারি না, এইটাই দুঃখ | সারা পৃথিবীর পরিসংখ্যান স্বীকার করে যে  “ড্রাগ-এডিকশান” এখন আগের থেকে অনেক কম, সে তো খুব আশার কথা, তাই না?
পরিশেষে বলি ‘ইন্টারনেট’কে আমাদের বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করতে হবে, ‘বড় সুস্বাদুখানা তাই যতপার খাও’ করলে তো শরীর খারাপ হবেই ! আমাদের জীবনের হিসেবটাই তো তাই ! সর্বত্র সেই ‘ব্যালান্স’ করে চলা, এই আর কি  !
ঊর্মিমালা বসু
বাচিক শিল্পী
ইন্টারনেট বা আন্তর্জাল নিয়ে ভ্রূকুঞ্চন বিশেষভবে যাঁরা এটির ব্যবহার জানেন না তাঁদের মধ্যেই বেশি । তার ওপর আমার মত মধ্য-বয়সিনীরা যদি নিয়মিত ইন্টারনেটে বসেন তাহলে তাঁরা একটু আধটু ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের স্বীকার হয়ে থাকেন । কিন্তু এটি যে প্রতিমূহুর্তে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয় তার কোনো তুলনা হয়না । একটি ছোঁয়ায় যেভাবে শত শত অমরাবতীর উত্সমুখ খুলে যায় এই ইন্টারনেটে যা বিস্ময়কর বললেও কিছুই বলা হয়না । আমার কাছে এটি ক্লান্তি অপনোদনের জায়গা, দিনের শেষে ঘরে ফেরার মতই আমার ঘরটির নিভৃতে আমি কি করব না করব সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার সেখানে আমি স্বাধীন কাজেই এর যা কুফল সেটি গ্রহণ-বর্জন করার বিষয় আমি ঠিক করব । ইন্টারনেটে আমার চরিত্র নির্মাণ বা ধ্বংসের বিষয় কোনো ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করিনা ।
আমি নিজে একজন বাচিক শিল্পী হয়ে ইউটিবের মত একটু সহজলভ্য, ভিডিওর মুক্তমঞ্চের ঠেকে সাবলীলভাবে বিচরণ করে হদিশ পেয়ে যাই নতুন নতুন কবিতার  । নতুন নতুন কবিদের কাব্যগুচ্ছ পড়ে এবং পাঠ করে নতুন  শিল্পীসত্তায় মেতে উঠি । সেও আমার কাছে এক বড় প্রাপ্তি !
পামেলা মিত্র
আর.জে
92.7 বিগ এফ এম
ইন্টারনেট নিয়ে লিখতে বসে কি জানি নিজের অজান্তে নেটের উইকিপিডিয়ার জ্ঞানভান্ডার খুলে বসিনি তো ! এই আকর্ষণটাই এমন, চাইলেও তার থেকে দুরে থাকতে পারবনা । আসলে  এ হল এক বড় সড় জ্ঞানের ভাঁড়ার । তার আকৃতি আমার কাছে জানতে চাইলে বলব একটা পেটমোটা জালা, যেখানে একটা গোটা বিশ্ব স্থান পেয়েছে । রেডিওতে সারাদিন ধরে অজস্র বকবক করি কিন্তু চোখ থাকে নেটের পাতায় । ইনফো-এন্টারটেনিং প্রোগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের একমাত্র ভরসা এই নেট । যখন তথ্য-গান-ছবি সবকিছুই নিমেষের মধ্যেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে । হয়ত বলার গুণে সেটা অন্য রকম রূপ পায় কিন্তু উত্স একটাই সেটি হল ইন্টারনেট বা যন্ত্রজাল । সার্ভার ডাউন থাকলে কি যে পাগল প্রায় অবস্থা হয় তা কাজ করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাই ।
প্রায়ই আমার শ্রোতাবন্ধুদের ফেসবুকে আসতে বলি কিম্বা ইমেল করতে বলি । এটা একদিকে যেমন রেডিও-শোয়ের রং আনে তেমনি একসাথে অনেকের কাছে পৌঁছানো যায় । এভাবেই আসল সোশ্যাল্-নেটওয়ার্কিং সম্ভব হয় । ইন্টারনেট সিস্টেম এতটাই ফ্লেক্সিবল যে সুবিধা পাওয়ার জন্য চার দেওয়ালে বন্দী থাকতে হয়না । আমাদের হাতে রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা, এবং সর্বোপরি ডেটাকার্ড সহ আরো অনেক কিছু । এর প্রয়োজন আজকের যুগে এতটাই যে কুফলের কথা লিখতে চাইনা । যেটুকুনি অসন্তোষ জমা হয় তাকে কিন্তু অতি সহজেই মিটিয়ে ফেলা যায় । অনৈতিকভাবে কিম্বা অপ্রয়োজনে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ হলে আতঙ্কের কিছু থাকবেনা ।
পরিশেষে বলি ৩০০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে আমিও সেই একজন তাই জাল থেকে মুক্তি নেই আর হবেও না ।
সুশান্ত কর
লেখক, ব্লগার, অধ্যাপক
তিনসুকিয়া কলেজ
বিশ্বের এক আধুনিকতম বৃহত আধার ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মিডিয়া । তাকে নইলে রেডিও, প্রিন্ট মিডিয়া, টিভি কারোর চলেনা ।
যাদবপুরের মতো প্রযুক্তিবিদ্যার কেন্দ্রে গিয়েও দেখেছি ওখানকার অধ্যাপকেরা কম্পিউটারে বাংলা লেখেন শুধু পাওয়ার পয়েন্টে স্লাইডশো দেখাতে। বাংলা হরফে ইংরেজি লিখে দূর দেশের বন্ধুকে মুহূর্তের পাঠাতে পারেন বার্তা। উত্তরভারতের হিন্দিভাষিরাও কেউ আজকাল ইংরেজি হরফে হিন্দি লেখেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। এতো ভুরি ভুরি হিন্দি সাইট আর ব্যক্তিগত ব্লগ রয়েছে যে সে এক সমূদ্র।
কম্পিউটার বুঝি “ইংরেজি” ছাড়া কিছু বোঝে না, এই এক ঔপনিবেশিক বোধ আজ আমাদের আর নেই বুঝি ।
ইন্টারনেট প্রান্তের ভাষাগুলোকে আবার নিয়ে আসছে চিহ্নপ্রক্রিয়ার কেন্দ্রে। সামনের সারিতে। বন্দী ভাষাকে করছে মুক্ত। অভ্রের স্লোগানই হচ্ছে ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত! অচিরেই ভাষা রাজনীতির চেহারাটাকে ইন্টারনেট আর কম্পিউটার দেবে পালটে… ভাবা যায় ?

হাজার পৃষ্ঠার চারশ টাকার লিটিল ম্যাগ শুধু বুদ্ধিজীবিদের জন্যে প্রকাশ করেও যারা প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার বড়াই করেন বা করতেন তাদের দিকে চোখটি না ফেলে গট গট করে বিশ্বজয়ের পতাকা উড়িয়ে দিচ্ছে ই-ম্যাগাজিন বা ওয়েব-পত্রিকা গুলি । আপনি বিনে পয়সায় পড়তে পারেন। শুনতেও পারেন, কেননা অনেকেই সেখানে সঙ্গীত বক্তৃতাও তুলে দিচ্ছেন, নিজেদের লেখালেখির সঙ্গে। এই ভাবেই পুরোনো সেই পটের কথা আর ওঝাপালার ঐতিহ্যকে নিয়ে এসছেন ফিরিয়ে। কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই বটে, থাকবে কী করে? সে তো সশরীরে হাজির না হয়ে সোশ্যাল-নেটওয়ার্কেই সেরে নিচ্ছি আমরা । সেই আড্ডায় যোগ দিচ্ছে তিনসুকিয়া থেকে তিউনেশিয়ার বাঙালি।

রবীন্দ্রনাথের দেড়শত বছরের সবচাইতে সেরা অর্জন যদি আমাদের কিছু থেকে থাকে তবে এই যে তাঁর লেখার প্রায় সবটাই এখন মেলে ইন্টারনেটে। এতো ঢাউস রচনাবলী আপনি কিনবেন কী করে, রাখবেন কৈ, সে নিয়ে সামান্যও মাথাব্যথা না ঘটিয়ে আপনি খুঁজে নিন ইণ্টারনেটে। যেখানে থাকুন যেভাবে থাকুন, নেট আছে তো রবীন্দ্রনাথ আপনার সঙ্গে আছেন।
আগে মানুষ লিখত ডায়েরী বা রোজনামচা । এখন লেখেন ব্লগ । রেসিপি থেকে গল্প, কবিতা থেকে ভ্রমণ সর্বত্রই তাদের অবাধ বিচরণ এই ডিজিটাল মিডিয়ায় পা রেখে সাহিত্য সৃষ্টিসুখে । ব্লগ লিখতে যদি আপনার আগ্রহ জন্মায়, অথচ না জানেন কী করে কী করতে হয়–আপনাকে পরামর্শ দেবার জন্যে রয়েছে অনেক ওয়েবসাইট । বাংলা লিখতে আপনি কি বানান ভুল করেন? দেখে নেবার জন্যে সংসদের অভিধান সহ আছে প্রচুর একভাষিক দ্বিভাষিক অভিধান।
This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

8 Responses to এবং যন্ত্রজাল

  1. paramita bhowal বলেছেন:

    Indira, Utkarsho bhabnate darun kaj korcho. ..aro aro anek kichu agami dine paoar lobhe……
    amar antorik shubheccha.

  2. Rupsha বলেছেন:

    Great ! Chakroboithok section ti besh anyorakom laglo ! kato chena manusher alapcharita porlam …. bhalo laglo… keep it up ! anek shubhechchhaa roilo Papyrus er jonyo !

  3. Sushanta বলেছেন:

    দেখলাম! দেখালাম! আপনার শ্রম সার্থক হোক! প্রচুর খেটেছেন ইন্দিরাদি!

  4. শ্রদ্ধা বলেছেন:

    ei section ta obhinobo… khub bhalo laglo sokoler lekha poRte..

  5. Prithwis Mukerjee বলেছেন:

    It seems strange that the web — and its underlying platform, the Internet or Yantrajaal — that was virtually unknown a decade ago is now so ubiquitous and touches so many lives in so many different ways. As it thrives and grows and seduces us with its siren charms, it is only a matter of time that access to the web becomes as critical to us as access to water and electricity.

  6. Subhasish Das বলেছেন:

    Barnali,very impressive writeup…..duto lekhayi porlam..duto issue te..online subscription korlam……thanks for your information

  7. Swati Sarkar বলেছেন:

    somoyopojogi site……oghaan manusher bhul dhyan dharona gulo bodlano khub dorkaar….ami Urmimala bosu sathe ekmot…jrontro jaal klanti oponodon er boro madhyam

Prithwis Mukerjee এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল